গাইবান্ধাগোবিন্দগঞ্জ

হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ কৃষির ঐতিহ্য ‘মামুন কৃষাণ’

গ্রাম প্রধান দেশ আমাদের বাংলাদেশ। গ্রামের প্রধান চালিকা শক্তি কৃষি কাজ। কৃষিতে যারা টাকার বিনিময়ে কাজ করে তাঁদের কৃষাণ বলা হয়। কিন্তু অন্যের উপকারের স্বার্থে যারা দুই তিন বেলা ভালো খাওয়ার জন্য কাজ করে দেয় তাঁদের ‘মামুন কৃষাণ’ বা ‘মামুন কামলা’ বলা হয়। সাধারণত অপেশাদার কৃষি শ্রমিকেরা বিশেষ করে ছাত্ররা এই মামুন কৃষাণ হিসেবে কাজ করে থাকে। তাঁরা কাজের বিনিময়ে কোন টাকা গ্রহণ করে না। অনেকটা বনভোজনের আনন্দের মতো করে দলবদ্ধভাবে তাঁরা বিপদে থাকা কৃষকের কাজ করে দেয়। গ্রামীণ কৃষির এই ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

এক সময় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ধান কাটার সময় মামুন কৃষাণের বহুল প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন মামুন কৃষাণ দেওয়ার প্রচলন নেই বললেই চলে। এখন কম মানুষই মামুন কৃষাণ দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়। আগে মামুন কৃষাণের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হতো।

হরিনাথপুর গ্রামের মামুন কৃষাণ দলের সদস্য গোবিন্দগঞ্জ সরকারি কলেজের ডিগ্রীর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এখন মানুষ আরও বেশি কর্ম ব্যস্ত। এলাকায় কাজ না থাকলে তারা ঢাকা ও গাজীপুরে কাজের সন্ধানে যায়। চলতি আমন মৌসুমের ধান রোপণের সময় এখন। কৃষাণের অভাব দেখা দেওয়ায় তারা কয়েক জন ছাত্র বন্ধু মিলে মামুন কৃষাণের একটা দল গড়ে তুলেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই দল যাদের কৃষাণের খুব বেশি দরকার তাঁদের সহযোগিতা করছে। গত ধান কাটার মৌসুমে কয়েক জন কৃষকের ধান কাটায় সহযোগিতা করা হয়েছে।’

ওই মামুন কৃষাণ দলের সদস্য স্কুলছাত্র রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই দলে সবাই ছাত্র। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা লেখাপড়া করে। এখন বাড়িতে থাকায় কৃষকদের উপকার করার জন্য মামুন কৃষাণ দিচ্ছি। মামুন কৃষাণ দিয়ে কোনো টাকা নেওয়া হয় না।’ তিনি আরও জানান, মামুন কৃষাণে তারা সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার খান। এটা তাঁদের কাছে অনেকটা বনভোজনের মতো একটা ব্যাপার।

উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের সতীতলা গ্রামের এমন একটি মামুন কৃষাণ দলের সদস্য শাকিল। তিনি বলেন, ‘তাঁদের একটা মামুন কৃষাণের দল আছে। ধান কাটার সময় এই দল দুই বেলা খেয়ে যার খুব প্রয়োজন তাঁর পাকা ধান কেটে দেয়।’

মামুন কৃষাণ দিয়ে ধান রোপণ করে নেওয়া হরিনাথপুরের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘টাকা দিয়েও কৃষাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে ধান রোপণের সময়ও শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তখন আমরা মামুন কৃষাণ দলের সদস্য মনিরুজ্জামানের শরণাপন্ন হই। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা ২২ শতক জমিতে ধান রোপণ করে দেয়।’

সুত্র: আজকের পত্রিকা

Back to top button