শাকির লাগিয়েছে ১১ হাজার গাছ

২০১৩ সালে ১৩টি গাছ লাগানোর মাধ্যমে শুরু হয় শাকিরের গাছযাত্রা। ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত শাকির ১১ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন। সিলেট শহরের স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান এবং সরকারি যে কোনো খালি জায়গা, সড়ক বিভাজন কিংবা সড়কের পাশে গাছ লাগিয়েছেন তিনি। নিম, হরীতকী, বহেড়া, নাগেশ্বর, বকুল, দেবদারু, রঙ্গন, শিমুল, রাধাচূড়া, কড়াই, শীল, অর্জুন, চাকাড়শি, কাঠবাদাম, লুকলুকি, আগর ও বিভিন্ন ধরনের ফল-ফুলসহ প্রায় ৪৩ রকমের গাছের চারা রোপণ করেন এই গাছপাগল তরুণ। এই গাছের চারা রোপণ সম্পূর্ণ তার নিজ অর্থায়নেই করা হয়। শুধু গাছের চারা রোপণ করেই থেমে থাকেননি শাকির, মানুষকে গাছ লাগাতেও উদ্বুদ্ধ করেন ও বিনামূল্যে বীজ এবং চারাও বিতরণ করেন। গাছ লাগানোর এই দীর্ঘ যাত্রা তার জন্য খুব একটা সুখকর ছিল না। শাকির বলেন, ‘গাছ লাগাতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছি। বিশেষ করে সরকারি জায়গায় গাছ লাগানোর অনুমতি, গাছ লাগানোর দু’দিনের মধ্যে গাছ উপড়ে ফেলা বা মাথা ভেঙে ফেলার মতো ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এমনও হয়েছে একই জায়গায় ১২ থেকে ১৩ বার গাছ রোপণের পর গাছ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। একবার ইউনিয়ন পরিষদে গাছ রোপণ করতে যাই; তখন তারা তাদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য আমার লাগানো গাছ তুলে আমার ওপরে ছুড়ে মারে। তবে আমি মোটেও দুঃখ পাইনি, বরং হাসিমুখে গাছের চারা নিয়ে এসে অন্য জায়গায় লাগাই। এখন সেই গাছ ১২-১৪ ফুট লম্বা হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এর চেয়ে আনন্দের কী আছে!’
শাকির চান গাছ লাগানোর মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসুক সবাই। তিনি আরও বলেন, ‘গাছের যত্ন নিলে যেমন ভূমি ভালো থাকবে, তেমন আগামী প্রজন্মও পাবে সুন্দর এক পৃথিবী। আমাদের মা-বাবার প্রতি আমাদের যেমন দায়িত্ব থাকে, তেমনি এই জন্মভূমির প্রতিও আমরা ঋণী। এ দেশকে ভালো রাখতে, এ দেশের মানুষকে ভালো রাখতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। এই গাছ যেমন প্রকৃতির বন্ধু, তেমনি আমাদেরও পরম বন্ধু।’
সিলেটের ছেলে শাহ সিকান্দার আহমেদ শাকির। গাছের সঙ্গে যার সম্পর্ক নিবিড়। যার ধ্যান-জ্ঞানজুড়ে শুধুই গাছ। গাছই তার প্রেম, গাছই তার ভালোবাসা। শৈশব-কৈশোর কেটেছে এ সিলেটেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমসি কলেজ থেকে ইংরেজি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি তার এক অদম্য মায়া। তিনি চান, তরুণদের মধ্যে সেই মায়া জন্ম নিক। তবেই সবুজ বাংলাদেশ পাব আমরা।
সুত্র: সমকাল