মায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়ে, বিপাকে স্বজনেরা

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মা-মেয়ে। ঘটনাটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে। এ নিয়ে বিপাকে স্বজনেরা। প্রকাশ্যে তাঁরা কারও পক্ষে কাজ করতে পারছেন না।
মা-মেয়ে দুজনই একই পদে বামনডাঙ্গা ইউপির ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে লড়ছেন।
বাবা মো. মন্তাজ আলী স্ত্রী মজিদা বেগমকে সমর্থন দিয়ে বলেন, ‘স্ত্রীসহ দিনরাত মাঠে কাজ করছি। ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি আমরা। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমাদের বিজয় ঠেকাতে পারবে না কেউ।’
এক প্রশ্নের জবাবে মো. মন্তাজ আলী আজকের পত্রিকাকে জানান, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে মায়ের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন মেয়ে মোর্শেদা বেগম।
স্থানীয় ভোটার ফজলুর রহমান বলেন, ‘হামরা মুছিবতে আছি। মা মজিদা বেগমকে ভোট দেব নাকি তাঁর মেয়ে মোর্শেদা বেগমকে ভোট দেব। কারণ, দুজনই আমাদের কাছের লোক। ওমরা ভোটে দারে বসি আছে। সকল মুসিবত এখন হামার।’
স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, ‘দুজনই আমাদের আপনজন। ইচ্ছা থাকার পরও কারও পক্ষ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারছি না। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।’
শেষ পর্যন্ত মা-মেয়ে এভাবে থাকলে একজনও নির্বাচিত হতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন স্বজনেরা। তাঁরা আরও বলেন, এখনো শোধরানোর সময় আছে। তা না হলে বড় বিপদ তাঁদেরই হবে। কিন্তু তাঁরা (মা-মেয়ে) বিষয়টা বুঝতে পারছেন না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, ‘মাঝে মাঝে চিন্তা হয় মা-মেয়ের কাউকে এবার ভোট দেব না। কারণ, ভোটের আগেই তাঁরা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।’
মা মজিদা বেগম বলেন, ‘জাতীয় মহিলা পার্টির ২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি আমি। দীর্ঘদিন ধরে এ দলের সঙ্গে যুক্ত আছি। সে কারণে বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়েছে আমাকে। কিন্তু সেখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। আর এ কারণেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সবাইকে দেখিয়ে দেব টাকা ছাড়া পরিষদে কাজ হয় কি না।’ মানসিকতা থাকলে সব সম্ভব বললেন প্রার্থী মজিদা বেগম।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়ের সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিজয় আমার নিশ্চিত। নির্বাচনী মাঠে আমার জনপ্রিয়তায় ক্ষুব্ধ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তাঁরাই আমার মেয়েকে দিয়ে আমার বিরোধিতা করছেন। পারিবারিক দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন অন্য প্রতিপক্ষরা।’
মেয়ে মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও দিবসে শুভেচ্ছা-সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন লাগিয়ে আসছি এলাকায় অনেক দিন ধরে। আমি নির্বাচন করার জন্য এ ধরনের কাজগুলো করে আসছি। জনপ্রিয়তাও আছে আমার। তারা আমাকে ছাড়ছে না এ নির্বাচনে। তাদের কথায় নির্বাচনে লড়ছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’ মায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে বিষয়টি স্বীকার করে বলে মোর্শেদা বলেন, ‘মায়ের ভোট মা করবেন, আমার ভোট আমি করব। জনপ্রিয়তা যার বেশি জনগণ তাকে ভোট দেবে।’ তবে তিনিও আশাবাদী জনগণ তাঁকেই বিজয়ী করবেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইউপি ভোটে নিযুক্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সেকান্দার আলী বলেন, ভোটে একই পরিবারে একাধিক প্রার্থী হতে পারেন। এতে বিধিতে কোনো সমস্যা নেই।
উল্লেখ্য, উপজেলার ১৩ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট ১০৪ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য ২২০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৮ নভেম্বর।