বাছুরের ওলানের তরল দুধ নয়, এটি ক্ষতিকর

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার হাসান বলেন, ‘বাছুরের দুধ দেয়ার ঘটনাটি আসলে অস্বাভাবিক। মূলত হরমোনজনিত কারণে এটা হতে পারে। বাছুরটির দুগ্ধগ্রন্থি থেকে দুধ নয়; এটাকে আমরা এক ধরনের তরল পদার্থ বলতে পারি।’
‘মাত্র ১৫ দিন বয়সী বকনা বাছুর দিচ্ছে ৭৫০ গ্রাম দুধ’ এমন শিরোনামে একাধিক প্রথম সারির দৈনিকসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন নিউজপোর্টালে সংবাদ এসেছে। গণমাধ্যমে আসা এই খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
দুই সপ্তাহ বয়সের বাকনা বাছুরের দুধ দেয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরমনজনিত কারণে বাছুরের দুগ্ধগ্রন্থি থেকে এক ধরনের তরল নিঃসৃত হচ্ছে। যা পানে মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে।
সংবাদমাধ্যমে খবরে বলা হয়, গত ১ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের কিশামত সর্বানন্দ গ্রামের খামারি আফছার আলীর একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী বাছুরটি জন্ম দেয়। ২৫ সেপ্টেম্বর ওই খামারি বাছুরের দুগ্ধগ্রন্থি ফোলা ফাপা দেখতে পান। এরপর স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শে বাছুর থেকে দুধ সংগ্রহ শুরু করেন। সেই বাছুরটি দৈনিক ৫০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
খামারি আফছার আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘হঠাৎ বাছুরের ওলান ফোলা দেখে তিনি স্থানীয় পশু চিকিৎসক রশিদ মিয়ার কাছে যান। ওই চিকিৎসক বিষয়টি অলৌকিক উল্লেখ করে খামারিকে দুধ সংগ্রহের পরামর্শ দেন। এরপর থেকে আফছার আলী সেই দুধ সাদৃশ্য পদার্থ সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু দুধ পান না করে তিনি তা ডাস্টবিনে ফেলে দেন।
আফছার আলী বলেন, ‘রশিদ ডাক্তারের কথা শুনি দুধ দোয়াচি। কিন্তু দুধ তো গন্ধ করে। খাবার পাই নে। ফেলে দিছি। ডেইলি তিনি চারবের দোয়ালে পোয়া খানেক দুধ আসপের নাকছিল।’
তিনি বলেন, ‘এখন দেখি দুধ দোয়াই ভুল করছি। বাছুর তো অসুস্থ হয়া গেছে। বাঁচপে কী মরবে তাও কবার পাই নে। ডাক্তারও গতকাল ওলানোত হাত দিবের মানা করছে। কাল থাকি আর দোয়াই নে। এখন বাছুর ভাল ঠেকপেনাকছে।’
সংবাদপত্রে প্রতিবেদন দেখে গত ১০ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন রেবা বেগম খামারির বাড়িতে যান। পরে তিনি বিষয়টি দেখে গরুর মালিক আফছার আলীকে ‘বাছুরের দুগ্ধস্থান থেকে যে তরল বের হচ্ছে’ সেটি সংগ্রহ না করার নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে এই তরল পান না করতেও মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন।’
ভেটেরিনারি সার্জন রেবা বেগম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হরমোনজনিত কারণে বাছুরের ওলান থেকে তরল পদার্থ বের হচ্ছে। এটাকে আমরা স্বাভাবিক দুধ বলতে পারি না। এছাড়া এই তরল পান না করাই উত্তম।’
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার হাসান বলেন, ‘বাছুরের দুধ দেয়ার ঘটনাটি আসলে অস্বাভাবিক। মূলত হরমোনজনিত কারণে এটা হতে পারে। বাছুরটির দুগ্ধগ্রন্থি থেকে দুধ নয়; এটাকে আমরা এক ধরনের তরল পদার্থ বলতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল ১২ অক্টোবর আমরা বাছুরটি পরিদর্শনে যাব। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। এরপর ঘটনার সঠিক কারণ জানা যাবে।’
এই তরল সংগ্রহে বাছুরের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এটা মালিককে বুঝতে হবে। এ ছাড়া এই পদার্থ পান ক্ষতির কারণও হতে পারে বলে জানান তিনি।
সুত্র: নিউজবাংলা