গাইবান্ধাপলাশবাড়ী

পলাশবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী কালিবাড়ী চামড়ার হাটে আমদানী ভালো তবে দাম কম

দেশের অন্যতম চামড়া কেনা-বেচার হাট গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরশহরের ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ীহাট। চামড়ার হাটটি দীর্ঘ বছর ধরে সপ্তাহের প্রতি শনি ও বুধবার বসলেও পরবর্তিতে শুধু বুধবার করে বসে আসছে।শুধু উত্তরাঞ্চল নয় রাজধানী ঢাকা থেকে ট্যানারি, আড়ৎদার, বিভিন্ন লেদার কোম্পানি, ছোট-বড় ক্রেতাসহ চামড়া শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ক্রেতারা হাটটিতে আসেন। সারাবছরের ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে বছরের দুই ঈদে হাটটি চামড়া বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মিলন মেলার স্থান হিসেবে পরিণত হয়। এবারের কোরবানির ঈদ-উল-আযহা হয়েছে গত (২১ জুলাই) বুধবার। ঈদ পরবর্তী বুধবার (২৮ জুলাই) ছিল চামড়া হাটের নির্দিষ্ট দিন।

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কালীবাড়ী হাটটিতে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ ট্যানারী, মহাজন এবং বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিদের পদচারণা ঘটলেও এবারে কোরবানির চামড়ার মূল্য বলতে গেলে ছিল একেবারে কম। রাজধানী ঢাকা বেশকিছু ট্যানারীর প্রতিনিধি এলেও শুধুমাত্র তারা বাজার জানার চেষ্টার করেন। এবারে হাটে চামড়ার আমদানী ভালো কিন্তু দাম ছিল কম।হাট সংশ্লিষ্ট বলেন, গত বারের মতো এবারও কোরবানীর চামড়ার দরপতন এবং করোনা পরিস্থিতিতে চলমান বিধি-নিষেধ ছাড়াও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাটটি জমে উঠেনি।এবার কোরবানীর ঈদে মাঠ পর্যায় ফড়িয়া ক্রেতাদের ক্রয়কৃত চামড়া প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করণের ফলে চামড়া আমদানি প্রথম বুধবার হাটে নিয়ে আসেন। ফলে বুধবার (২৮ (জুলাই) কাকডাকা ভোর থেকেই শুরু হয় চামড়া বেচাকেনা। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল থেকেই রাজধানী ঢাকা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, হাট-বাজার থেকে চামড়া ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমন ঘটে। তবে এবার হাটে ক্রেতা উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম।

হাটে চামড়ার আমদানি থাকলেও দাম ছিল কম। এমন পরিস্থিতিতে হাটে হা-হুতাশ করেছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। চামড়ার কাঙ্খিত দাম না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তাদের অভিযোগ, একে তো দাম নেই। তারপরও লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ অনেক বেশি। কিন্তু হাটে প্রচুর চামড়ার সরবরাহ থাকলেও পাইকারদের তেমন আগ্রহ না থাকায় অনেকে আসল টাকা তোলা নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করেন।অন্যদিকে, বছরের পর বছর ট্যানারী মালিকদের নিকট টাকা পড়ে থাকায় স্বস্তিতে নেই পাইকাররাও। পাইকাররা বলেন, বছরের পর বছর ধরে ট্যানারী মালিকদের কাছে টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় ক্ষতির মুখে তারা। তাদের ধারদেনা করে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে লোকসান গুণছেন।চামড়ার বাজার সম্পর্কে মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং পাইকারদের তেমন কোন ধারণা না থাকায় এমন পরিস্থিতি বলে মনে করেন চামড়া কিনতে আসা ট্যানারী সংশ্লিষ্টরা।এদিকে, চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলেন, চামড়া সংরক্ষণে মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং পাইকারদের আরো বেশি প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি।

ঠাকুরগাঁও থেকে ১৮০টি চামড়া নিয়ে হাটে আসা প্রান্তিক ব্যবসায়ী দবির উদ্দিন জানান, হাটে সরকার নির্ধারিত চামড়া মূল্য গরু প্রতি ফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ১৭ টাকা দরে কেনা হচ্ছে না। বরং পিস হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হতে দেখা গেছে। এতে আমার মতো প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, লবণ দিয়ে সংরক্ষণ ও শ্রমিকের খরচ মিলে প্রতিটা গরুর চামড়ায় ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা খরচ হয়। সেই চামড়া বাজারে ব্যাপারীরা ৪শ’ ৫০ টাকা দরে কিনছেন। এই দামে বিক্রি করলে প্রতিটা চামড়ায় ১শ’ ৫০ টাকার বেশি লোকসান হবে। আবার চামড়া বাড়িতে ফিরিয়ে নিলেও খরচ আরো বাড়বে।কালীবাড়ী হাটে চামড়া বেচাকেনায় দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিজ্ঞতায় রংপুরের মীরবাগ থেকে আসা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালের আগের বছরগুলোতে চামড়ার ভালো দাম ছিল। ২০১৯ সালের দরপতনের ধারাবাহিকতায় এ বছর চামড়া অন্ততঃ ৪ থেকে ৫টি পৃথক গ্রেডে ২শ’ হতে ৫শ’ এবং অল্পকিছু চামড়া ৬শ’ হতে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে লোকসান হোক কিংবা লাভ টাকার অংক ছিল যতসমান্য। ছাগলের প্রতি পিস চামড়া ২ হতে ৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কোন-কোন ক্ষেত্রে ৮০-৯০টি ছাগলের চামড়া একত্রে ১শ’ টাকা হতে ২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তারা। ছাগল-ভেড়ার চামড়া ক্রয় ও বিক্রয়ে ফঁড়িয়ারা বেশ লোকসান গুণছেন এবার।

হাট ইজারাদারের পক্ষে শফিকুল ইসলাম মিন্টু জানান, হাটে চামড়ার আমদানী ভালো হলেও দাম ছিল কম। তবে গত ঈদের তুলনায় এবার হাটে অর্ধেকেরও কম চামড়া আমদানী ঘটে।দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাটটিতে চামড়া ক্রেতাবিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের কেনাকাটা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সার্বক্ষণিক সাদা ও পোষাকধারী পুলিশের নিরাপত্তা টহল জোরদার ছিল বলে জানান পলাশবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান মাসুদ।তবে মঙ্গলবার গভীররাত থেকেই ধপাস-ধপাস শব্দে গরু-খাসি, বকরি-ভেঁড়া-মহিষের চামড়ার প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের সাথে কেনাবেচার পর্ব শুরু হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে আসা ক্রেতারা বুধবার সকালের আগেই হাটের মূল কেন্দ্রে সমেবেত হতে থাকেন। বুধবার দিনভর পেরিয়ে রাতনাগাদ চলে চামড়া কেনা বেচা। বাজার মূল্য হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বুধবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে যাচাই-বাছাইসহ চামড়া কেনা-বেচা চলছিল।

Back to top button