
আবারো বাজলো ঢং-ঢং ঘন্টা। উড়লো লাল সবুজের পতাকা। প্রভাতী ঊষার সোনালী উদয়ে যেন দ্বিতীয় সকাল। স্নেহের প্রিয় শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখরিত পলাশবাড়ীর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণগুলো। প্রতিক্ষার মহেন্দ্রক্ষণে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণে উৎসবের আমেজে বন্ধ কপাট খুললো প্রায় ১৮ মাস পর। শিক্ষকবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে আর কপালে থার্মোমিটারে জ্বর নিরুপণ করার মধ্যদিয়ে বরণ করে নিলেন প্রিয় শিক্ষার্থীদের।দেশে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুললো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ১১ মার্চ হতে ২০২১ সালর ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে স্বশরীরে সকল প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী পাঠদান। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত বিদ্যালয়গুলো।রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পলাশবাড়ী পৌরশহরের এসএম মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল চন্দ্র সরকার জানান, দীর্ঘদিন পর আনন্দ মুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পেরে খুউব খুশি। বহুদিন পর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের পেয়ে তাদেরকে দেখে মহাআনন্দের মনে হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা অনুসরণ পূর্বক করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি সতেচনতামূলক ব্যানার ও ফেস্টুন টানিয়ে দেয়াসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রথম দিনের শ্রেণী পাঠদান শুরু করা হয়েছে।
এদিকে; পলাশবাড়ী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাহেদার রহমান সরকার জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিনের পাঠদান নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের এসে আনন্দ অনুভব করছে। করোনা প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ধোয়া-মোছাসহ জীবানুনাশক স্প্রে করা ছাড়াও সতেচনতামূলক ব্যানার এবং ফেস্টুন টানানো হয়েছে।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ৮ ইউনিয়ন এবং ১ পৌরসভায় স্কুল- কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ভোকেশনাল রয়েছে ৭৬টি। এতে মোট শিক্ষার্থীর সংখা ৬৫ হাজার ৭শ’ ৪১জন। এরমধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৪শ’ ৯৬জন। কলেজ ৫টিতে ৪ হাজার ৮শ’ ১০ জন। স্কুল এন্ড কলেজ ৪টিতে ৩ হাজার ৪শ’ ৮৫ জন। ইবতেদায়ী, দাখিল, আলিম, ফাযিল মাদ্রাসা ১৮টিতে মোট শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৮শ’ ৪১ জন। কারিগরি ও ভোকেশনাল ২ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫শ’ ৫৬ জন ছাড়াও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ৫৩টিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫শ’ ৯৪ জন।উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় সরকারী ২১৬টি এবং বে-সরকারী ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার ৩শ’ ১৭ জন।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুহাঃ মাহতাব হোসেন বলেন, উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নেতৃত্বে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শতভাগ শেষ করা হয়েছে।
এছাড়াও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যানার ও ফেস্টুন টানানোর নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে উৎসব মুখর পরিবেশে প্রথম দিনের পাঠদান শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে গত কয়েকদিন থেকে আমি এবং উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারদের সাথে নিয়ে এসব মনিটরিং করেছি।উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোসা. নাজমা খাতুন বলেন, উপজেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে আজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যানার ও ফেস্টুন টানানোসহ পাঠদানের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলার ৯টি পৃথক ক্লাষ্টার ভিত্তিক সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সমন্বয়ে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশন সমূহ বাস্তবায়ন এবং তা নিয়মিত মনিটরিংও অব্যাহত রাখা হয়েছে।সর্বোপরি আজকের এই প্রত্যাশিত বিশেষ দিনে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান নয়ন প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলকে শুভ কামনা ও অভিনন্দন জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান শিক্ষাই জাতীর মেরুদন্ড। প্রাণোচ্ছল শিক্ষার্থীসহ সবার জন্য দিনটি খুশির। তবে খুশিতে যেন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে যেন ভুলে না যাই। সবাই সুস্থ্য থাকি-সাবধানে থাকি। নতুন করে যেন কোন ঘোর অনামিষা ক্রান্তিকালের মুখাপেক্ষী পড়তে না হয়।