গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্তে আনন্দ মিছিল

দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা-ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্তে স্থানীয়রা আনন্দ মিছিল করেছেন। শনিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয় উচ্ছ্াস। এরপর বেলা ১২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ চারমাথা থানা মোড় থেকে বের করা হয় আনন্দ মিছিল। এতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকাড নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। মিছিলটি পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার চারমাথা থানা মোড়ে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সুসজ্জিত ট্রাকে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রোড-শো অনুষ্ঠিত হয়। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাবাসী ও সাংবাদিকবৃন্দের আয়োজনে আনন্দ মিছিল ও রোড-শো’র এ কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে অডিও কলে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান। গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
গত ২৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ- বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গোবিন্দগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের ১ হাজার ৮৪২ একর জমির ওপর বেপজা আগামী বছরের জানুয়ারিতে ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু করবে। দেশে ইতোমধ্যে আটটি ইপিজেড স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নবম ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ‘রংপুর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা-আরইপিজেড’ হবে দেশের দশম ইপিজেড।
এরপর থেকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা শুরু হয়। এলাকাবাসীর মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। পরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানায় উপজেলাবাসী।
বীরমুক্তিযোদ্ধা শ্যামলেন্দু মোহন রায় জীবু বাবুর সভাপতিত্বে আনন্দ মিছিলের আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক খোকন আহম্মেদ, রাসেল কবির, রফিকুল ইসলাম রফিক, মোয়াজ্জেম হোসেন আকন্দ, আনোয়ারুল ইসলাম, উজ্জ¦ল হক প্রধান, মোস্তফা কামাল সুমন প্রমুখ।
বক্তারা গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত এবং উপজেলাসহ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উন্মোচন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন চলতি বছরেই সকল আনুসঙ্গিক দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করে অতি দ্রæত দেশের দশম এই ইপিজেড স্থাপনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
তারা বলেন, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থাকার পরও এ প্রকল্পের বিরোধিতা করার কোনো যুক্তি নেই। তারপরও যারা বিরোধীতা করবে গোবিন্দগঞ্জবাসী মেনে নেবে না। তারা উন্নয়নের পক্ষে, ইপিজেডের পক্ষে অবস্থান নেবে।
এরআগে গত ২৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মে প্রস্তাবিত ইপিজেড এলাকা পরিদর্শনে এসে বেপজা চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রংপুর ও বগুড়ার মধ্যবর্তী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড স্থাপন হলে এই অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এই ইপিজেডে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের লেখাপড়া, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সব ধরণের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে এবং আন্তর্জাতিক মানের কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে এই ইপিজেডে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাদের পুনর্বাসন ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ প্রকল্পে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বেপজা ১৯৮০ সালে গঠনের পর শুরু হয় ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কাজ। চট্টগ্রাম ইপিজেড দিয়েই সেটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। চট্টগ্রাম ইপিজেড প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ১৯৯৩ সালে এসে গড়ে ওঠে ঢাকা ইপিজেড। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৯৯৯ সালে মংলা, ২০০০ সালে কুমিল্লা, ২০০১ সালে ঈশ্বরদী ও নীলফামারীতে উত্তরা, ২০০৬ সালে নারায়ণগঞ্জে আদমজী ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী ইপিজেডের যাত্রা শুরু হয়।
সুত্র: আমারজেলা ডট নিউজ