গাইবান্ধাসাদুল্যাপুর

গাইবান্ধায় ফুল চাষিদের ব্যস্ত সময়

প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের ঘণ্টা বাজছে। শীতের বিদায়ে গাছে গাছে নতুন পাতা আর ফুলের ছড়াছড়ি। প্রকৃতি যেন রঙিন সাজে সেজেছে। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বিস্তির্ণ মাঠজুড়ে এখন গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ নানা রঙের ফুল। এখান থেকেই জেলাজুড়ে ফুল সরবরাহ করা হয়। আর কয়েকদিন পর বসন্ত উৎসব। তারপর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই তিনটি দিবসের বাজার ধরতে প্রস্তুত এখানকার ফুল চাষিরা। ভালো মানের ফুল বাজারজাত করতে এখন তারা পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ দিবসগুলোতে প্রায় কোটি টাকার বেচাকেনা করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন ফুল চাষিরা।

এরই মধ্যে ফুল চাষি, পাইকার, শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের ফুল বাগান ও বাজার। জেলায় যে ফুল বিক্রি হয় তার প্রায় বেশিরভাগই সরবরাহ করা হয় এখানকার বাগানগুলো থেকে। পহেলা ফাল্গুন বসন্ত বরণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখেই এখন ব্যস্ততা বেড়েছে ফুল চাষিদের। এসব দিবসকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহ করছেন ফুল চাষি ও ব্যবসায়িরা। ফুল চাষকে আরো লাভজনক করে তুলতে সরকারি সহযোগিতা চান সংশ্লিষ্টরা।

ফুল চাষিরা জানান, গেল দু’বছর করোনা বিধিনিষেধের কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। এ বছর যদি ফুলের দর ভাল পায় তাহলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করেন তারা।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফুল চাষি মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বাগানে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, গোলাপ, গাঁদা ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষ হলেও, করোনা মহামারী শুরুর পর এবার এক বিঘা জমির বাগানে শুধু গোলাপ আর গাঁদার চাষ করে বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল সরবরাহ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফুলের ভরা মৌসুমে আমাদের নাওয়া খাওয়া থাকে না। তবে তুলনামূলক ফুলের চাহিদা ও দাম এখনও একটু কম। বর্তমানে গোলাপ ৮ থেকে ১০ টাকা পিস ও গাঁদা ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমির ফুল মওসুমে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়।

একই ইউনিয়নের চকনদী গ্রামের ফুল চাষি আনিসুর রহমান বলেন, ৪০ শতক জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গোলাপ রোপণ করা যায়। এতে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। যার মধ্যে চারার দাম ৫০ হাজার টাকা এবং সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরী আর রোপণসহ অন্যান্য খরচ আরও ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিচর্যা ও পরিবহনে রয়েছে বাড়তি খরচ। একবার চারা রোপণে ৬ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত গোলাপ ফুল পাওয়া যায়।

চাষিরা জানান, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফুল বাগানগুলোর ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে এবছর চাষ হয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদাসহ বিভিন্ন ধরণের ফুল। তাদের উৎপাদিত ফুল ঢাকা, রংপুরসহ গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার ও ব্যবসায়িরা এসে নিয়ে যান। কখনও কখনও চাহিদামাফিক ফুল কার্টুনে প্যাকেটজাত করে কুরিয়ারে পাঠানো হয়। এখানকার ফুল চাষিরা প্রতি মৌসুমে ৭টি উৎসবকে ঘিরে মূল বেচাকেনা করে থাকেন। উৎসবগুলোর মধ্যে বিজয় দিবস ও খ্রিস্টীয় নববর্ষের বেচাকেনা শেষ করেছেন তারা। আসন্ন বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ফুল বাজারে তুলতে প্রস্তুত চাষিরা। তাই প্রতিটি বাগানে গোলাপ, গাঁদাসহ অন্যান্য ফুল পরিচর্যায় এখন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সুত্র: আমারজেলা ডট নিউজ

Back to top button