
বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের তিস্তামুখ ফেরিঘাট ক্যাম্পেও ধাওয়া করেন। এরপর হানাদাররা আশ্রয় নেয় সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি বাঁধে। সেখানে সম্মুখযুদ্ধের পর প্রায় দুই শ পাকিস্তানি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত হয় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা। গাইবান্ধায় এটিই প্রথম হানাদারমুক্ত এলাকা।
প্রতিবছর দিনটি ফুলছড়ি মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।এই অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদে ও এর থেকে চার কিলোমিটার দূরে তিস্তামুখ রেলওয়ে ফেরিঘাট এলাকায় ঘাঁটি গড়ে তোলে হানাদার বাহিনী। এই দুই ক্যাম্প থেকে তারা নিয়মিত হত্যা, নারী নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করত।
৩ ডিসেম্বর রাতে গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামছুল আলম, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল জলিল তোতা ও এনামুল হকের নেতৃত্বে চারটি দলে ভাগ হয়ে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দেন।পরদিন সূর্য ওঠার আগেই তারা ফুলছড়ি থানায় আক্রমণ করেন। তাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা এই ক্যাম্প ছেড়ে তিস্তামুখ ফেরিঘাট ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সেখানেও ধাওয়া করেন। এরপর হানাদাররা আশ্রয় নেয় সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি বাঁধে। সেখানে সম্মুখযুদ্ধের পর প্রায় দুই শ পাকিস্তানি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিটের যুদ্ধে পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। আর পাকিস্তানিদের নিহত হয় ২৭ জন।
১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌতম চন্দ্র মোদক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ শহীদের মরদেহ ৫ ডিসেম্বর গরুর গাড়িতে করে সাঘাটা থানার সগুনা ইউনিয়নের খামার ধনারুহা স্কুলমাঠে নেয়া হয়। সেখানেই তাদের সমাহিত করা হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর তাদের সম্মানে সগুনা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিনগর ইউনিয়ন রাখা হয়।
‘তাদের কবরের পাশে স্মৃতিস্তম্ভ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবছর আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শহীদদের স্মরণ করি।’ফুলছড়ি মুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও সাঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিনগরের ধনারুহা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।