গাইবান্ধায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ

না খ্যায়্যা এ্যাকবেলা থাকান যায়। কিনতো জারের (শীত) কসটে আইতোত নিন (ঘুম) ধরেনা। ট্যাকার অভাবোত চাউল কিনব্যার পাইনে, শিতের কাপড়া কিনমো ক্যামন করি। একাত ওকাত হয়া আইত কাটাই। আচকে তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বলকোনা প্যায়্যা ভালো হলো। আইতোত কমবোল কোনা গাওত দিয়া আরামকরি নিন (ঘুম) পারব্যার পামো। প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে এভাবেই নিজের ভাষায় কথাগুলো বললেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দঘিলকান্দি গ্রামের আমিনুল মিয়া (৭৫)। সকাল থেকেই বিতরণস্থলে কম্বলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একই গ্রামের মোসলেমা বেগম (৬০)। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, এবারক্যা শিতোত এ্যাকনা কম্বলের জন্যে চেয়ারম্যানের বাড়িত গেচিনো। তাই হামাক কম্বল দেয় নাই। খালি কয়, সোরকার দ্যায়না, হামরা কোনটে থাকি দেমো। তোমারঘরে পোত্তম আলোর কম্বল প্যায়া উপোকার হলো, আল্লায় তোমাঘরে ভালো করুক বাবা।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বুধবার গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে ২০০ জনের প্রত্যেককে একটি করে কম্বল দেওয়া হয়। দুপুর দুইটার দিকে যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে একটি করে মাস্ক দেওয়া হয়। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিতরণ কার্যক্রম চলে। এরআগে তারা গতকাল মঙ্গলবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে শীর্তাত মানুষের তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা ধরে আজ বুধবার নদী ভাঙন কবলিত ওই ইউনিয়নে শীতার্ত নারী পুরুষের মধ্যে গাইবান্ধা বন্ধুসভার সদস্যরা কম্বল বিতরণ করে।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে হলদিয়া ইউনিয়ন। প্রায় ১৮ হাজার লোক অধ্যুষিত হলদিয়া ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ভাঙন কবলিত। প্রতিবছর নদীতে আবাদি জমি ভেঙ্গে চর জেগে উঠছে। এরমধ্যে দঘিলকান্দ,ি কানাইপাড়া ও চনিরিপটল গ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। যমুনার ভাঙনে এসব গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। যমুনা তীরবর্তী এসব গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ গরীব, অসহায়। একসময়ের গৃহস্থরা এখন নদী ভাঙনে নি:স্ব। তারা নদীতে মাছ শিকার করে এবং দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কম্বল পাওয়া হলদিয়া ইউনিয়নের দঘিলকান্দি গ্রামের আবেদা বেগম (৫৫) বলেন, তিনবচর থাকি কোন সরকারি কম্বল পাই নাই। আচক্যা তোমারঘরে আলোর কম্বল পানো। ছোট নাতিটা শিতের কসটে নিন (ঘুম) পারব্যার পায়না। অ্যাচকা রাতোত নাতিটাক নিয়্যা ঘুম পারব্যার পামো।
কানাইপাড়া গ্রামের মর্জিনা বেগম (৪৮) বলেন, দুকন্যা খ্যাতা (কাঁথা) দিয়া রাত কাটাই। সন্ধ্যাত থাকি আগুন জ্বলে থাকি। সোয়ামিক কোছিলাম একটা কম্বল আনার জন্যে। কিনতো তাঈ কিনি আনব্যার পায় নাই। তোমরা হামাক কম্বল দিবার আচ্চেন, আল্লায় তোমার ঘরে আলোর ভালো করুক। চনিরিপটল গ্রামের নুর নেছা (৫২) বলেন, হামারঘরে সোংসারোত চারকোনা মানুস। কিনতো সগলের শিতের কাপড়া নাই। দুকনে কাতা (কাথা) আর এ্যাকনা কমবোল দিয়া পালাকরি আইত কাটাই। হামারঘরে বাড়ি দুরোত দেকি কাউয়ো কমবোল দিব্যার আইসে না। তোমরাঘরে জারের মদ্দে কমবোল দিব্যার আচ্চেন, তোমারঘরে ভালো হবে। হলদিয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক (৬৫) বলেন, হামরা আগেবারও শীতের মধ্যে কম্বল পাই নাই। খুব কষ্ট করে আছিলাম এবার কম্বল পাইয়া উপকার হলো।
হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাকিল মন্ডল বলেন, এখানকার দরিদ্র মানুষ দু’বেলা ঠিকমত খেতে পারে না, তাদের জন্য গরম কাপড় কেনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলো নিজের দায়িত্বের বাইরে মানবিক কাজগুলো করছে। বিশেষত শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সব পত্রিকারই এই কাজে এগিয়ে আসা উচিত।
কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) নূর আলম সিদ্দিক, সাঘাটা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রজব আলী, স্থানীয় সমাজকর্মী আবদুর রশিদ, গাইবান্ধা প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি মিল্লাত হোসাইন, সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান মাসুদ ও হাসান ইমাম, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক রিপন আকন্দ এবং প্রচার সম্পাদক রেজাউল করিম, প্রথম আলোর প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন প্রমুখ।