এক বাগান থেকেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে আড়াই লাখ টাকার ড্রাগন

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুরে প্রায় ৮ একর জমিতে শোভা পাচ্ছে ৫০ হাজার ড্রাগনের চারা। এরমধ্যে প্রতিটি চারায় ফলেছে সুস্বাদু ড্রাগন ফল। একেকটি চারায় ১০ থেকে ২০টি ফল এসেছে। প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন বাগান থেকে ফল উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও প্রতিদিন গড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করা হচ্ছে এ বাগান থেকে।
শখের ড্রাগন চাষ এখন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে এভাবেই। কয়েকদিন পরপর বাগান থেকে ফল উত্তোলন করা হয়। পরে প্যাকেট জাত করে ঢাকার বিভিন্ন ফলের আড়তে পাঠানো হয় এসব ফল। শখের বশে ড্রাগনের বাগান গড়ে তুলেছেন সেখানকার সানফ্লাওয়ার কোল্ড স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী হাজী মো. মনিরুজ্জামান। ১৬ একর জমিতে ৮ একর ড্রাগন ও বাকি ৮ একর জমিতে অন্যান্য ফল গাছ রয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ৮ জন শ্রমিক ড্রাগন ফল উত্তোলন করছেন। ফলগুলোকে বাজার জাত করার জন্য ট্রেতে পেপার দিয়ে ফল ভর্তি করা হচ্ছে। এছাড়া আরও কয়েকজন মিলে ড্রাগন চারা পরিচর্যা করছেন। প্রতিটি ড্রাগন চারায় বিভিন্ন ধরনের জৈবসার ব্যবহার করছে। এক একটি গাছের উচ্চতা ৫ ফুট ছাড়িয়ে গেছে।
বাগান ঘুরে দেখা গেছে, মালব্রি, আম, লিচু ও ভিয়েতনামের নারিকেলও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। শখের বসেই করা বাগান এখন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। স্বপ্ন দেখছেন বিদেশি জাতের এসব ফলের বাজারজাত করণের। ১৬ একর জমিতে এসব ফলের চাষাবাদ করছেন তিনি।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি মৌসুমে অন্তত ৭৫ মেট্রিক টন ড্রাগন ফল উৎপাদন হবে।
এদিকে বাকি ৮ একর জমির মধ্যে ভিয়েতনামি নারিকেল ৩০টি, মালব্রি ১০টি, আম ৮০০টি, লিচু ৩০০টি, খেঁজুর ২৫টি, আতা ২০০টি, জম্বুরা ৩০০টি, বড় কমলা ২৫০, ছোট কমলা ২৫০, মাল্টা ২৫০টি মোট ২৫ জাতের ফল গাছ রয়েছে সানফ্লাওয়ার এগ্রোতে। এখন পর্যন্ত শুধু ২৫ জাতের ফল গাছের চারা রোপণ করতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটি শুরু করেন ২০২০ সালে প্রথম মাস থেকে। প্রথম দিকে ৫০০টিরও বেশি ড্রাগন উত্তোলন হয়। সবগুলো ফল বিনামূল্যে স্থানীয়দের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়।
কৃষি শ্রমিক জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি বাগানে। প্রতিদিন পরিচর্যা করতে হয় গাছগুলোকে।
সানফ্লাওয়ার এগ্রোতে দায়িত্বে থাকা সেলিম হালদার জানান, প্রথমে শখের বসেই চাষ শুরু করেছিলেন, এখন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। কিন্তু এখন এটি মানুষের জন্য অনুকরণীয় হয়ে গেছে। নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর ড্রাগন ফলের বাগান দেখে আশপাশের কৃষকরাও চাষ করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। এরমধ্যে ৮ একর জমিতে ৫০ হাজার ড্রাগন ফল চাষ হয়েছে।
তিনি জানান, এর পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া ২৫ জাতের ফল গাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ফলগাছ দেশের বাইরের। ২০২০ সালে কিছু পরিমাণ জমিতে ড্রাগন চাষ করা হয়। পরে এর থেকে ফলন উত্তোলন হয় এবং ফল খুবই মিষ্টি হওয়ায় পুরো ৮ একর জমিজুরে ড্রাগন চাষ করা হয়।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়নুল আলম তালুকদার জানান, আব্দুল্লাহপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান তিনি নিজ উদ্যোগে এ বাগানটি তৈরি করেছেন। আমরা দেখেছি ৮ একর জমির ওপর ড্রাগন বাগান তৈরি করেছেন। এছাড়া তিনি আরও ৮ একর জমিতে অন্যান্য ফলের চারা রোপণ করেছেন। এটি যদি বৃহত্তর আকার ধারণ করতে পারে তাহলে আমরা আরও লাভবান হবো। সঙ্গে ফলের চাহিদাও পূরণ করতে পারব। ড্রাগন বাগানের আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা।
আমাদের লক্ষ্য রয়েছে, সামনের দিনে অন্যান্য জায়গায় এ ধরনের কোনো কিছু করা যায় কিনা। যদি কোনো যুবক এ ধরনের কিছু করতে চায় তাহলে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ পেশায় যুক্ত করা হবে। কারণ ড্রাগন ফল হচ্ছে লাভজনক ব্যবসা। এ ফলে কোনো লোকসান হয় না। ড্রাগন ফল জুন মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফলন দিবে। এরপর ডিসেম্বর পর্যন্ত ফল দেয়। এরপর পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। এর ফলন বেশি হয় গরমকালে।