গাইবান্ধাসুন্দরগঞ্জ

একজনের ভাতার টাকা অন্যজনের ফোনে

‘বাপো মুই মইছছোম। এখন কী হইবে? মোর টেকা মাইনষের নাম্বারে গেইছে বলেই। ব্যাংক থাকি যত দিন টেকা দিছে, কোনো সমস্যা হয় নাই। এমার কাছে মবেল নাম্বার দিছি, হাতে টেকা পাই না বাপো। এখন হামার টেকার কী হইবে বাপো?’—দুই হাত উঁচু করে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন বিধবা তহমিনা বেওয়া। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের খামার ধুবনি গ্রামে। বই নম্বর ৪৪৭।

এ সমস্যা শুধু তাঁর একার নয়, হাজারেরও বেশি ভাতাভোগীর। অপর এক ভাতাভোগী মোজাহার আলী বলেন, ‘আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছে। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। দুই মাস থেকে অফিসে ঘুরছি। কেই কিছু বলছেন না। আসি আর ঘুরে যাই।’

সমাজসেবা অফিসের সামনে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ানো সুফিয়া খাতুন জানান, বয়স্ক ভাতার টাকা পেতে মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়ে নগদ অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। সঙ্গের কেউ কেউ টাকা পেলেও তিনি পাননি। এ জন্য এসেছেন সমাজসেবা অফিসে। সেখানে এসে জানতে পারেন তাঁর টাকা অন্য মোবাইলে চলে গেছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সরকারপ্রদত্ত সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় অসচ্ছল বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত মোট হতদরিদ্রের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৫৯৫। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ২৩ হাজার ৬৯৯ জন। বিধবা ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন ১২ হাজার ৫৯৬ জন। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ৭ হাজার ৩০০ জন।

সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, ব্যাংকের মাধ্যমে যত দিন ভাতা দেওয়া হয়েছে তত দিন টাকা পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এ অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলে মোবাইল নম্বর নেওয়ার পর থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সমাজসেবা অফিসে কর্মরতদের ব্যবহারও সন্তোষজনক নয়। এখানে এলে তাঁদের চরম হয়রানি করা হচ্ছে। ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা অফিসে দায়িত্বে থাকা লোকজনের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে এমনটা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

জানতে চাইলে ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর গাইবান্ধার সুপারভাইজার একরামুল হক বলেন, ‘এত বেশি ভুল হয়নি। তবে দু-একজন অভিযোগ নিয়ে অফিসে আসেন এবং তাঁদের নাম্বার আমরা সংশোধন করে দিচ্ছি।’ এর বেশি কিছু জানতে চাইলে নগদের টেরিটরি কর্মকর্তার (টিএম) সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে ‘নগদ’-এর গাইবান্ধা জেলা টেরিটরি কর্মকর্তা (টিএম) আসিফ জানান, সমাজসেবা অফিস থেকে যে মোবাইল নম্বরগুলো আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেসব নম্বরেই আমরা কাজ করেছি। কাজেই আমাদের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই সমাজসেবা অফিসের। এটি তারাই করেছে।

হয়রানির কথা অস্বীকার করে সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান খান (অতিরিক্ত) বলেন, ‘সমস্যা দুই ধরনের। এর মধ্যে প্রায় ৭৮০ জনের সমস্যা সমাধানে সমন্বয় সাধন চলছে। দ্রুত এগুলো সমাধান হবে আশা করছি। আর যেসব ভাতাভোগীর টাকা অন্যের নম্বরে চলে গেছে, সেগুলোর বিষয়ে ঝামেলা আছে। তবে টাকা উদ্ধারে ব্যাপক তৎপর রয়েছি। ইতিমধ্যে কয়েকজনের টাকা ফেরত নিয়েও দিয়েছি। দিতে সক্ষম হয়েছি। আর এ ধরনের ভাতাভোগীর সংখ্যা শতাধিক।’

Back to top button