
গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ি উপজেলার অসুখে পা হারানো পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া নয়নমণি এবং পলাশবাড়ি উপজেলার ঢোলভাঙ্গার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আশু মিয়া পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলছড়ির উত্তর উড়িয়া গ্রামের কটিয়ার ভিটা গ্রামে নয়নমণির মা সুমি বেগম ও বাবা নয়ন মিয়ার হাতে তিনটি ছাগল, পাঁচটি হাঁস, পাঁচটি মুরগি ও একটি সেলাই মেশিন তুলে দেয় শুভসংঘের বন্ধুরা। নয়নমণিকে দেওয়া হয় একটি নতুন ক্রাচ। তাদের হাতে এসব তুলে দেন কেন্দ্রীয় শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, স্থানীয় জেলা সম্পাদক লতা সরকার, সামিউল ইসলাম সাকিব, শিমুল হাওলাদার, উম্মে কুলসুম তালুকদার তুলনা, জান্নাতুল মাওয়া মীম, রেহেনা রিসাত, জুঁই খাতুন তানহা, কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি অমিতাভ দাশ হিমুন, চ্যানেল ২৪ এর প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম প্রিন্সসহ অন্যরা।
এ সময় নয়নের মা সুমি বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ঘরবাড়ি, জমিজমা হারিয়ে তারা এই গ্রামে আশ্রয় নেন। তার স্বামী নয়া মিয়া একটি ইট খোলায় কাজ করেন। অভাবের সংসারে মেয়ে ও ছেলে সাদেকুরকে নিয়ে তার দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে দিন কাটছে। এর আগেও শুভসংঘ নয়নমণিকে বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থ সহায়তায় শিক্ষাবৃত্তি দেয়।
এখন সেলাই মেশিন আর হাঁস-মুরগি-ছাগল পেয়ে তিনি আশায় বুক বাঁধছেন। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের এ মহান উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে নিজের ভাষায় বলেন, ‘আল্লাহ তোমারঘরের সগ্যলের ভাল করব্যে’।
সবচেয়ে খুশি ছিল নয়নমণি। ২০১৯ সালের বন্যার সময় পড়ে গিয়ে তার বাঁ পায়ে আঘাত লাগে। পরিবারের অর্থকষ্টে চিকিৎসা হয়নি। যখন তার সমস্যা চরমে তখন রংপুরের চিকিৎসকরা সেটিকে ক্যান্সার শনাক্ত করে হাঁটুর নিচ থেকে কেটে দেন। সেই থেকে এক পায়ের শক্তিতে লেখাপড়ায় মন দেয় সে। অদম্য মেধাবী এই মেয়েটি স্থানীয় কটিয়ার ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। জানাল, বসুন্ধরা গ্রুপের সাহায্য পেয়ে তার পড়াশোনার খরচ অনেকটাই ভালোভাবে চলছে।
বিকেলে পলাশবাড়ি-গাইবান্ধা সড়কের ঢোলভাঙ্গা বাজারে সড়কের পাশে উন্মুক্ত এলাকায় চকিতে বসে ব্যবসা করা অতিদরিদ্র আশু মিয়াকে একটি ভ্রাম্যমাণ ছোট দোকান উপহার দেওয়া হয়। ‘আশু মিয়ার আশা’ নামে ওই দোকানটিতে পর্যাপ্ত মালামাল তুলে দেন শুভসংঘের কর্মীরা।
নতুন ছাউনিওয়ালা দোকান আর মালামাল পেয়ে আশু মিয়া বললেন, তার ছেলে মেহেদি হাসান ঢাকার তিতুমীর কলেজে অনার্স পড়ছে। বসুন্ধরা গ্রুপের এই সহযোগিতা তার পরিবারকে অর্থকষ্ট থেকে রক্ষা করবে। সন্ধ্যার পর এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।
শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও শুভসংঘের প্রধান কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্বে অসহায়দের স্বাবলম্বী করতে দেশজুড়ে কাজ করছে শুভসংঘ।
তিনি আরো বলেন, আগামীকাল শুক্রবার শুভসংঘ নির্মিত গাইবান্ধার ফুলছড়িতে প্রতিবন্ধী আমেনার দোকান ‘আমেনার আশা’ উদ্বোধন করা হবে। তাঁকে একটি হুইল চেয়ারসহ দোকানের মালামাল কিনে দেওয়া হয়েছে। বিকেলে সদর উপজেলা রামচন্দ্রপুরে এই প্রতিবন্ধী শিশুকে হুইল চেয়ার দেওয়া হবে। বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে এ সব করা হচ্ছে।
সুত্র: কালের কন্ঠ