আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গরুর হাল

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গরু, লাঙল ও জোয়াল। আমাদের দেশে এক সময় লাঙল ও গরুর হাল ছাড়া কৃষি জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তাই করা যেত না। কালের পরিক্রমায় এ চিত্র এখন দেখা গেলেও বাংলার এ অতীত ঐতিহ্য উত্তরের জেলা দিনাজপুরে কিছু কিছু গ্রামগুলোতে এখনও লক্ষ্য করা যায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হচ্ছে। এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু, মহিষ পালন করত হালচাষ করার জন্য। অনেকে গবাদিপশু দিয়ে হালচাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হালচাষ করে তারা সংসারের ব্যয়ভার বহন করতেন। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমিচাষ করে পেত পরিবারের সচ্ছলতা। তেমন এক চিত্র দেখা গেল দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে।
সরেজমিন দেখা যায় গোবিন্দপুর গ্রামের মেধ্যাপাড়া এলাকার বাবুল ইসলাম প্রতিবিঘা জমি ৫-৬শ’ টাকা হারে তার দুটি গরুর হাল ও লাঙল দিয়ে চাষ করছেন। বাবুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পূর্ব পুরুষের হাত ধরে প্রায় ২০-২৫ বছর আগে থেকেই এই কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত। প্রতিবছর চাষের মৌসুমে প্রতিদিন ১০০০-১২০০ টাকার মতো আয় হয়। উপার্জিত এই অর্থ দিয়ে গরুর খাদ্য ও সংসার খরচ হয়। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রের কারণে গরুর হালের চাপ কমে গেছে। এতে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বাসুদেব রায় জাগো২৪.নেট-কে বলেন, গরু-মহিষ, লাঙল ও জোয়াল ছিল কৃষকের আশীর্বাদ। গরু-মহিষ, লাঙ্গল ও জোয়াল ছিল আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশবান্ধব। কিন্তু বর্তমান সময়ে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকার ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করছে। এতে কৃষিতে উৎপাদন খরচ কমবে ও কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ফলে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকরা বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। তবে লাঙল-গরুর হাল চাষ এখনও জনপ্রিয়।